,

ঘূর্ণিঝড় ফণি: উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় খুলনার ২৪ লাখ মানুষ

খুলনা ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় জেলা খুলনার প্রায় ২৪ লাখ মানুষ। অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও সরকারি অন্যান্য দপ্তর। খুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ২৫০টি এবং বেসরকারি ৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবে ২ লাখ ৪২ হাজার মানুষ।

বৃহস্পতিবার সকালে খুলে দেওয়া হয়েছে সবক’টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং নয়টি উপজেলায় ৯টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায়। বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে নৌকা ও ট্রলার চলাচল। বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে যাত্রীবাহী কোনো লঞ্চ ছাড়েনি।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় খুলনার দাকোপ ও কয়রা উপজেলা চরম ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। বেলা ১১টা থেকে মাইকিং করা হচ্ছে এই দুই উপজেলায়। দাকোপে সিপিপির ১ হাজার ৩৬৫ জন ও কয়রায় ১ হাজার ৯৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে পাইকগাছা উপজেলাকেও। উদ্ধার প্রস্তুতির সঙ্গে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও সাহায্য মজুদ রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের ত্রাণ শাখা থেকে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় ৪৫৬ টন চাল, নগদ ৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা, ২০৪ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ বাবদ ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা মজুদ আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামালের নেতৃত্বে একটি স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দাকোপ উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। এই প্লান্টে ঘণ্টায় ৭০০ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০ লিটারের ৫০০টি পানির পাত্রও।

সূত্রটি জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার খুলনায় পাঠানো হয়েছে। এই প্যাকেটের মধ্যে রয়েছে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ৫০০ গ্রাম মুড়ি, ১ কেজি চিড়া, ১ ডজন মোমবাতি, ১ ডজন দিয়াশলাই ও ১ প্যাকেট বিস্কুট।

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন জানান, সব আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। উপকূলবাসীকে বিকেলের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলা দুর্যোগ প্রস্তুত কমিটির সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। রাতের মধ্যে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে উপস্থিত হবে না, তাদের বুঝিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তারা প্রস্তুত রয়েছেন। স্বল্প সময়ের মৌখিক নোটিশে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেবেন তারা।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আবদুর রাজ্জাক জানান, ফণী মোকাবেলার জন্য ১১৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

দাকোপ প্রতিনিধি জানান, লোকজনকে সতর্ক করে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে মাইকিং করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে। এছাড়া মসজিদ ও মন্দিরগুলো থেকেও মাইকিং করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি। দাকোপে ১ হাজার ৩৬৫ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন। উপকূলবাসী স্বেচ্ছায় আশ্রয়কেন্দ্রে না গেলে তাদের রাতের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। দুর্যোগকে কেন্দ্র করে উপজেলার দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিত্যপণ্যের দাম যাতে বাড়িয়ে দিতে না পারে, সেজন্য মনিটর করা হচ্ছে।

কয়রা সংবাদদাতা জানান, কয়রা উপজেলার বেশিরভাগ স্থানে এমনিতেই বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় নদীতে পানির চাপ বেড়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ৪-৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হলে কয়রা উপজেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সকালেই ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধের পাশ থেকে মানুষ ও গবাদিপশু সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এই দুর্যোগের সম্ভাব্য আঘাত হানার বিষয়ে আগাম সতর্ক করা হয়েছে জনগণকে। জেলার তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি এবং কালিগঞ্জে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে এরই মধ্যে। অপর চারটি উপজেলায়ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর